ঢাকার সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে অবস্থিত অননুমোদিত ‘সিলিকন সিটি’ প্রকল্পে হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে আবারও বালু ভরাট কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
সোমবার সরেজমিনে ভাকুর্তা ইউনিয়নের বড়বড়দেশি ও চাপড়া খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তুরাগ নদে একাধিক বালুভর্তি কার্গো নোঙর করেছে। সেখান থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে পাশ্ববর্তী সরকারি জমি ও জলাশয়ে দিনরাত সমানে বালু ভরাট কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাভার উপজেলার বড়বড়দেশি মৌজায় বিভিন্ন দাগে অসংখ্য খাল ও জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘চাপড়া খাল’ অন্যতম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) উল্লিখিত এলাকা মূল বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল, কৃষিজমি ও জলাধার হিসেবে চিহ্নিত।
সিলিকন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামক একটি আবাসন কোম্পানি রাজউক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন না নিয়েই খালসংলগ্ন কৃষিজমি ও নদীর অংশ ভরাট করে ‘সিলিকন সিটি’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। ইতিমধ্যে অননুমোদিত এ প্রকল্পে সাইনবোর্ড স্থাপনসহ স্থাপনা নির্মাণও শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রেক্ষাপটে, সাভারের বড়বড়দেশি মৌজার জলাশয়, কৃষিজমি ও নদীর অংশ ভরাটের বৈধতা নিয়ে গত বছর জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। পরে গত বছরের ২৬ মে প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি কে. এম. কামরুল কাদের এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সিলিকন সিটি প্রকল্পে মাটি ভরাট, প্লট বিক্রি ও রেজিস্ট্রেশনসহ সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে আদালত ওই আবাসন কোম্পানির অবৈধভাবে মাটি ভরাটের ফলে জলাশয়ের যে ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। নির্দেশটি দেওয়া হয় রাজউকের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে।
আদালত আরও জানতে চান—জলাধার ভরাটের ক্ষতিপূরণ সিলিকন সিটির কাছ থেকে আদায়ের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ভূমি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, পরিবেশ সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজউকের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি), রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, সাভার উপজেলার ইউএনও এবং সিলিকন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত বছরের ২ অক্টোবর তুরাগ নদ ও খাল দখল করে গড়ে তোলা সিলিকন সিটির এমডি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার আসামি, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’ সারোয়ার খালিদ (৪৫)–কে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র্যাব-২। তবে সম্প্রতি তিনি জামিনে বের হয়ে আবারও অবৈধভাবে খাল, জলাশয় এবং কৃষিজমি ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
বালু ভরাট বিষয়ে জানতে চাইলে ‘সিলিকন রিয়েল এস্টেট’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার বলেন, “আমাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। কিছু কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, সেগুলো মীমাংসা করেই আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান অথবা এমডি ভালো বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুবকর সরকার বলেন, “বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমি ঘটনাস্থলে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
ওএফ/আরএন